ত্যাগ ও কুরবানির সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে

 

আপনি কি ত্যাগ ও কুরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? কুরবানীর ত্যাগ ও হাদিস সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গাতে এসেছেন। আমি আজকে এই পোস্টে আপনাদের কোরবানির হাদিস সম্পর্কে জানাবো। আপনি যদি কোরবানির ত্যাগ ও হাদিস সম্পর্কে না জেনে থাকেন অবশ্যই এই পোস্টটি পড়তে থাকুন। 

ত্যাগ - ও - কুরবানির - সংক্রান্ত - হাদিস -  সম্পর্কে


আজকের এই পোস্টে আমি কুরবানী ত্যাগ ও হাদিস সম্পর্কে জানাবো।আজকে কোরবানি কোরবানির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনি যদি ইসলামিক ভাবে এই বিষয়টি জানতে চান তাহলে পোস্টটি সম্পন্ন ভাবে পড়তে থাকুন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা কোরবানি ত্যাগ ও গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্র :ত্যাগ ও কুরবানী  সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে। 

ত্যাগ ও কুরবানি সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে 

কুরবানী শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ত্যাগ ও উৎসর্গ করা। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে ১০জিলহজ হতে ১২জিলহজ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গৃহপালিত হালাল পশু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করাকে কুরবানী বলে। কুরবানী করতে হয় উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া,দুম্বা ইত্যাদি গৃহপালিত হালাল সবল পশু দ্বারা। 

খাব্বাব ইবনু আরাত রা.থেকে বর্ণিত, 

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কোন বিষয়ে অভিযোগ পেশ করলাম। তখন তিনি কাবা ঘরের ছায়ায তার চাদর কে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, আমাদের জন্য কি সাহায্য চাইবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না? 

তিনি বললেন, তোমাদের আগের লোকদের মাঝে ব্যক্তিও ছিল, যাকে ধরে নিয়ে জমিনে গর্ত করা হতো।তারপর করাত এনে মাথায় আঘাত হেনে টু টুকরা করে ফেলা হতো। লোহার শলাকা দিয়ে তার গোস্ত ও হাড্ডি খসানো হতো। তা সত্ত্বেও তার দীনথেকে থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারতো না। আল্লাহর কসম। এদীন অবশ্যই পূর্ণতা লাভ করবে। এমন হবে যে সানআ হাজারা মাওত পর্যন্ত ভ্রমণকারী ভ্রমণ করবে। অথচ সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবে না এবং নিজের মেষপালের জন্য বাঘের ভয় থাকবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছো। 

নিশা পরিমাণ মালের মালিক সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর নারীর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। কুরবানী আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহিম আ.এবং হযরত ইসমাইল আ.এর অতুলনীয় নিষ্ঠা ও অপূর্ব ত্যাগের পণ্যময় স্মৃতি বহন করে। কুরবানী দ্বারা মুসলিম মিল্লাত ঘোষণা করে যে,আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা জান মাল সবকিছু কোরবানি করতে প্রস্তুত।

আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করা হাদিস 

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করতে হবে। কুরবানী আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে। অহংকার বা গর্ভের মনোভাব নিয়ে নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, আল্লাহর নিকট গোস্ত ও রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, বোঝাই শুধু তোমাদের তাকওয়া। কুরবানীর নজিরবিহীন ত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করে মুসলমানগন আল্লাহর দরবারে শপথ করেন যে, হে আল্লাহ! আমাদের জান মাল, জীবন মৃত্যু, তোমারই জন্য উৎসর্গ করছি। তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমরা যেভাবে পশু কুরবানী করছি, তেমনি ভাবে আমাদের জীবন উৎসর্গ করতেও কুন্ঠিত হব না। 

কথায় বলে, "যে ব্যক্তি স্মৃতিপটে ইতিহাস সংরক্ষণ করে, তার জীবন আয়ু বৃদ্ধি পায়। মানুষ যখনই অতীতে দৃষ্টি দিবে এবং ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবে বা চিন্তা করবে। তখনই তাদের সামনে অনেক শিখন এর বিষয়গুলো চলে আসবে। তাই আল্লাহ পাক কিছু শিক্ষা ও উপদেশ বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহ তায়ালা নবী রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, 

"নিশ্চয়ই তাদের ঘটনায় বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষনীয় বিষয়, এটা কোন মনগড়া কথা উক্তি নয় বরং এটা পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সামর্থক, সবকিছুর বিষদ বিবরণ ও মুমিনদের জন্য হেদায়াত  ও রহমতের মহা উপকরণ।(সূরা ইউসুফ :১১১)

ত্যাগ ও কুরবানীর আয়াত 

ত্যাগ ও কোরবানি আয়াত সম্পর্কে অনেক ধারণা আছে। তবে কিছু আয়াত নিম্নে আলোচনা করা হলো -

১.অন্যদিকে মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের অভিযানে যে নিজের প্রাণ সমর্পণ করে। এই ধরনের বান্দার ওপর আল্লাহু অত্যন্ত স্নেহশীল ও মেহেরবান। (আল বাকারা :২০৭)

২.আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের এর ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানির হ্রাস  করে তোমাদের পরীক্ষা করব। এ অবস্থায় যারা সবর করে। (আল বাকারাহ:১৫৫)

৩.তোমরা কি মনে করে রেখেছো তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেননি তোমাদের মধ্যে কে তার পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। এবং কে তার জন্য সবুর কারী। (আলে ইমরান :১৪২)

৪.কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা  করে দেখার জন্য মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরা ক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। (আলমুলক :২)

৫.পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখেনি। এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ। (আল হাদিস :২২)

কুরবানী দেওয়ার উদ্দেশ্য 

মানুষের মধ্যে যেমন মনুষ্যত্ব আছে, তেমনি পশুত্বও আছে। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরবানীর মাধ্যমে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা। কিছু ব্যাখ্যা করে নিজে দেওয়া হলো -

১.আমরা আগে জেনেছি যে, নিশা পরিমাণ মালের মালিক মুসলিম নর ও নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। তবে নাবালকের ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। দিলে সোওয়াব হবে।

২.জিলহজ মাসের ১০,১১এবং ১২তারিখ পর্যন্ত কুরবানীর সময়। তবে ঈদুল আযহার সালাতের পরে কুরবানী করতে হয়। 

৩.ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা জন প্রতি একটি করে কোরবানি করতে হয়। গরু, মহিষ ও উট সাতজন পর্যন্ত শরিক হয়ে কুরবানী করা যায়। তবে সবার উদ্দেশ্যই আল্লাহর নৈকট্য  লাভ করতে হবে  

৪.ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, ও ইত্যাদি গৃহপালিত হালাল, সুস্থ ও সকল পশুর দ্বারা কুরবানী করতে হয়। পশুটি নির্দোষ ও নিখুঁত হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

৫.,ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর ;গরু মহিষ দুই বছর এবং উট কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সের হতে হবে। 

৬.কুরবানীর গোশত সাধারণত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিব মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন নিজে রাখতে হয়। 

৭.কুরবানীর গোশত বা চামড়া মজুরির বিনিময়ে দেওয়া যায় না। কুরবানীর পশুর রক্ত ও বর্জ্য মাটিতে পুঁতে রাখতে হয়। 

ত্যাগ - ও - কুরবানির - সংক্রান্ত - হাদিস -  সম্পর্কে


কুরবানী প্রচলন এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস 

আল্লাহুর আদেশে একদিন হযরত ইব্রাহিম (আ)স্ত্রী হাজেরা এবং তাদের বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র ইসমাইল (আ)-কে এখনকার দিনের লুপ্ত পরবর্তী জনমানব শূণ্য মরুভূমিতে রেখে চলে যান। আল্লাহ তায়ালার অপার করুণায় তারা নিরাপদে থাকেন। 

ইসমাইল (আ)যখন কিশোর বয়সে উপনীত, তখন ইব্রাহিম (আ)তাদের দেখতে এলেন।এবার তিনি এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহ তাকে আদেশ করেছেন প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ)-কে কুরবানী করতে। একই স্বপ্ন দেখলেন বারবার। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পুত্রকে কুরবানী করতে মনও স্থির করলেন। 

তিনি তার স্বপ্নের কথা ইসমাইল (আ)-কে জানিয়ে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি বল। উত্তরে ইসমাইল (আ)বললেন, হে আমার আব্বা, আপনি তাই করুন যা আপনাকে আদেশ করা হয়েছে। ইনশাল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। (সূরা আস সাফফাত, আয়াত :১০২)

পথে পিতা পুত্রকে শয়তান ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা শয়তানকে পাথর মেরে তাড়িয়ে দিলেন। ইব্রাহিম (আ)আল্লাহর প্রতি তার পুত্রের এমন আনুগত্য, নিষ্ঠা ও সাহসিকতা পূর্ণ উত্তরে খুশি  হলেন। তিনি প্রাণপ্রিয় পুত্রকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করতে তার গলায় ছুরি চালালেন। পুত্র ইসমাইল ও আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য ধারালো ছুরির নিচে মাথা পেতে দিলেন। একেবারে কঠিন পরীক্ষায়ও পিতা পুত্র উত্তীর্ণ হলেন। আল্লাহ তাআলা কুরবানী কবুল করলেন এবং ইসমাইলকে রক্ষা করলেন। তার পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানী হয়ে গেল। 

আল্লাহ তাআলার প্রতি হযরত ইব্রাহিম (আ)ও তার পুত্র ইসমাইল (আ)-এর অপরিসীম আনুগত্য ও অপূর্ব ত্যাগের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং মুসলিমদের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করার জন্য তখন থেকে কুরবানী প্রচলন রয়েছে। এটি চিরকালের জন্য মানব সমাজে একটি পবিত্র ধর্মান অনুষ্ঠানে রূপে প্রতিষ্ঠিত। 

কুরবানী শিক্ষা সম্পর্কে 

কুরবানী শিক্ষা সম্পর্কে সকলকে জানা উচিত। কুরবানী শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুরবানী শিক্ষা সম্পর্কে কিছু আলোচনা নিচে  দেওয়া হলো -

১.মুসলিমদের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করায় কুরবানীর উদ্দেশ্য 

২.আমরা যান মাল, জীবন-মৃত্যু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করি।

৩.কুরবানী দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মানুষের তাকওয়া যাচাই করেন। আল্লাহর কাছে কুরবানীর পশুর রক্ত, মাংস কিছু পৌঁছায় না, কোথায় শুধু অন্তরে তাকওয়া ও নিষ্ঠা। 

৪.মানুষের মধ্যে যেমন মনুষত্ব আছে, তেমনি পশুর তো আছে। কুরবানীর মাধ্যমে পশুত্বকে হত্যা করে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলা হয়। মানুষের লোভ-লালসা, হিংসা বিদ্বেষ, অহংকার ইত্যাদি পাশবিক চরিত্র বিসর্জন দিয়ে মানবীয় গুণাবলী উজ্জীবিত করতে পারলে কুরবানী সার্থক হয়। 

৫.কুরবানীর একটি অংশ গরিব মিসকিন কে দিতে হয়। এতে তাদের একটু ভালো খাওয়ার সুযোগ হয়। আত্মীয়-স্বজনকে দিতে হয়, এতে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। সকলের মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। 

কুরবানীর গোস্ত ও বন্টনের হাদিস 

ইসলামের দিক থেকে কুরবানী হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। এটি মৌলিক ইবাদত বলা যেতে পারে। প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কুরবানী ওয়াজিব করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর রাসূলদের আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষাও আছে  কোরবানিতে। তাই নবীজি কে আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দিয়েছেন -আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। (সূরা কাওসার :২)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে -(হে রাসুল!) আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরন রাব্বুল আলামিনের জন্য উৎসর্গিত। (সূরা আনআম :১৬২)আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরবানী করা পশুর মাংস ভাগ করার একটি সুদৃষ্ট নিয়ম আছে। 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশুর গোশত করার নিয়ম বলে দিয়েছেন ভালোভাবে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম কুরবানীর গোশত একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন। এক ভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক ভাগ গরিব মিসকিনদের  দিয়ে দিতেন। 

এছাড়া জীবন মাসউদ(রা.)কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির মিসকিনদেরদিতেন বলে বলা আছে। 

কুরবানির মাংস আত্মীয় ও গরিবদের মাঝে বিতরণ না করাটা খুব খারাপ কাজ। এতে কৃপণতা প্রকাশ পায়। কারণ কোরবানির মাধ্যমে কুরবান কুরবানী দাতা অহংকার থেকে নিরাপদ থাকেন এবং তার অন্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। 

আল্লাহ তায়ালাও এটাই চান, কুরবানীর গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনো পৌঁছায় না তার কাছে পৌঁছায় কেবলমাত্র তাকওয়া। 

ত্যাগ - ও - কুরবানির - সংক্রান্ত - হাদিস -  সম্পর্কে


কুরবানীর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস 

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, শাহাবায়ে একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানী কি? উত্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, এটা তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ)এর সুন্নাত। তাকে আবারো জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের কি ফজিলত রয়েছে? 

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা আবারও জিজ্ঞাসা করলেন পশম বিশিষ্ট পশুর বেলায় কি হবে? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কসমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকি রয়েছে সুবহানাল্লাহ! 

আরও পড়ুনঃ   কুরবানির ত্যাগ ও হাদিস সম্পর্কে। 

মমিন মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত দিনে কুরবানী করা মহান আল্লাহতালার নির্দেশ রয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা বলেন -অতএব "তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কুরবানী কর "।সূরা কাওসার :আয়াত  ২

আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে নামাজ ও কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুটি এবাদত সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি যেমন বেশি নামাজ আদায় করতেন তেমনি বেশি কুরবানীও করেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কুরবানী করা প্রসঙ্গে হাদিসে একটি বর্ণনা রয়েছে-

১.হযরত আনাস রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল আল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ দুই সিং বিশিষ্ট সাদা কালো মিশ্রিত রংয়ের দুইটি দুম্বা কোরবানি করেছিলেন। 

২.হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০বছর মদিনায় অবস্থান করেছেন।মদিনায় অবস্থানকালীন কুরবানী করেছেন। (মুসনাদে আহাম্মদ, তিরমিজি) 

৩.সামর্থ্যদের মধ্যে যারা কুরবানী করে না, তাদের প্রতি তিনি এভাবে হুঁশিয়ারি করেছেন হাদিসে এসেছে -রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছেও না আসে। 

৪.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন বছর কুরবানী থেকে বিরত থাকেন নি। তিনি কর্মের দ্বারা যেমন কোরবানি করতেন অনুপ্রাণিত করেছেন আবার বক্তব্য দিয়ে কোরবানির প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে এসেছে -যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে যবেহ করে সে নিজের জন্য জবিহ করে। আর যে নামাজের পর জবেহ করে তার কোরবানি নিষিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরিকার অনুসারী হয়। (বুখারী) 

কুরবানীর পশু কেমন হওয়া উচিত 

কুরবানির পশু সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো পশু কোরবানি দেওয়া যাবে না। কুরবানী দেওয়ার জন্য অবশ্যই গৃহপালিত চতুষ্পদযন্ত্র হতে হবে। যেমন গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট কিংবা দুম্বা হতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন -আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির বিশেষ রীতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা এসব গৃহপালিত পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে। যেগুলো আল্লাহ তা'আলা রিজিক রূপে প্রদান করেছেন। সূরা হজ্জ :৩৪

যারা সামর্থ্যবান ব্যক্তি রয়েছেন তাদের জন্য কুরবানী করা অবশ্যই ওয়াজিব।আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করে পশু কি নেতা আল্লাহর পথে জবাই করার নামই হলো কোরবানি। কুরবানীর এগুলো অবশ্যই বয়সে এক বছর পূর্ণ হতে হবে। ভেড়া যদি মোটাতাজা হয় এবং দেখতে এক বছর বয়সের মত হয় তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা যেতে পারে। গরু মহিষের ক্ষেত্রে শর্ত হলো দুই বছর পূর্ণ হতে হবে। আর উটের ক্ষেত্রে শর্ত হলো পাঁচ বছর পূর্ণ হতে হবে। 

এক পশুতে কতজন কোরবানি দিতে পারবেন তা হল -ছাগল, দুম্বা, ভেড়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি পশু ব্যক্তি কোরবানি দিতে পারবেন।তাতে একজনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। গরু, মহিষ ও উটের সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এতে মহানবী সাঃ হাদিসে বলেছেন -একটি উট ও গরু মহিষের সাত ব্যক্তি কোরবানির জন্য শরিক হতে পারে। মুসলিম :১৩১৮

কুরবানীর পশু দোষ ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। পশুর যেসব দুর্বলতার কারণে কুরবানী দেওয়া যাবে না তার কিছু তুলে দেয়া হলো -

অন্ধ, বধির, অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণশীর্ণ, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম, জন্মগতভাবে কান না থাকা, নিজের বেশিরভাগ অংশ কাটা, গুড়া সহ শিং উপরে যাওয়া, বেশিরভাগ দাগ না থাকা, পাগল হওয়ার কারণে ঘাস পানি ঠিকমতো না খাওয়া, রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, ছাগলের দুটি দুধের যে কোন একটি কাটা হওয়া, গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা হওয়া। 

হাদীসে রাসুল সালাম বলেছেন যে, চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ -যেটার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত -যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু -যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত -যার কোন অঙ্গ ভেঙে গেছে।ইবনে মাজাহ :৩১৪৪

শেষ কথা ঃ ত্যাগ ও কুরবানী সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে 

ত্যাগ  ও কুরবানী সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে আমরা এই পোস্টে জানলাম। পাঠক আজকে আমরা এই পোস্টে কিভাবে কুরবানীর ত্যাগ ও হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় এই বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। আমরা প্রত্যেকে জানি যে,আগামী মাসে কুরবানী ঈদ পালন করা হবে। তাই কুরবানী সম্পর্কে কিছু ধারনা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। 

আশা করছি আপনাদের সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি কিছুটা হলেও। যদি আপনাদের তো হয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই আমার সাথে থাকবেন। পরবর্তীতে আবারো ভাল কোন আর্টিকেল নিয়ে যেন আপনাদের সামনে হাজির হতে পারি সেই পর্যন্ত আপনারা সকলে ভাল থাকবেন। আজকে আমি ইসলামিক বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে আপনারা আমার সাথেই থাকবেন। 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url