দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করার উপায়
ওয়েট বা ওজন এমন একটি ব্যাপার যা বেশি হলে সমস্যা, আবার কম হলেও সমস্যা। প্রতিটি মানুষের বয়স, হাইট অনুযায়ী একটি আদর্শ ওজন থাকে। সেই স্বাভাবিক ও আদর্শ ওজন মেন্টেন করা সবার জন্য জরুরী। আমরা সাধারণত অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকে। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়েও কম ওজন থাকাটাও চিন্তার বিষয় আন্ডার ওয়েট প্রবলেম নিয়ে অনেকেই স্ট্রাগল করেন।
অনেকেই মনে করেন বেশি পরিমাণে খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়! না বুঝে অতিরিক্ত খাওয়া অথবা সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ওজন বাড়ানো -এগুলো ভবিষ্যতে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।কম ওজন নিয়ে যারা টেনশনে আছেন এর আলোচ্য বিষয় তাদের জন্য। তাহলে চলুন কিভাবে সহজ ও কার্যকারী টিপস জানবেন। এর জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।
পেজ সূচিপত্র :দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করার উপায়
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করার উপায়
- ওজন বৃদ্ধি করার ব্যায়াম
- ওজন বৃদ্ধি করার তালিকা
- স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধি
- ভিটামিন খেয়ে ওজন বৃদ্ধি
- মোটা হওয়ার জন্য করণীয়
- পুষ্টিকর খাবার খেয়ে ওজন বৃদ্ধি
- পরিমাণ মতো ঘুমিয়ে ওজন বৃদ্ধি
- ক্যালোরি ও নিউটন জেনে খাবার খাওয়া
- শেষ কথা :সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া
দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করার উপায়
প্রতিটি মানুষের আদর্শ ওজন থাকা জরুরী। অতিরিক্ত ওজন যেমন ভাল নয়, স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন থাকাও ঠিক নয়। ওজন বাড়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের ব্যক্তিদের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার, নিয়ম মতো শরীর চর্চা এবং সঠিক জীবন যাপন পদ্ধতি।
ওজন বাড়াতে নিম্নত কৌশল গুলো বেশ সহায়ক।
১.অতিরিক্ত ক্যালরির খাবার গ্রহণ :শরীরে যে পরিমাণ ক্যালরি প্রতিদিন ক্ষয় হয়, তার চেয়ে ৫০০-৭০০ক্যালোরি খাবার বেশি খেতে হবে। ভাত, মাছ মাংস, ডাল, বীজ, শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, দুগ্ধ জাতীয় খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
২.উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ :ওজন বাড়াতে চাইলে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে। এ ধরনের কিছু খাবার হল কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, পেস্তা বাদাম, চিনা বাদাম, খেজুর, কিসমিস, আলু বোখরা, ননিযুক্ত দুধ, ফুলক্রিম দই, পনির,ক্রিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস ও কলিজা, আলু, মিষ্টি আলু, অ্যাভোকাডো, পিনাট,মাখন ইত্যাদি।
৩.দিনে পাঁচ -ছয়বার খাবার গ্রহণ :যাদের ওজন কম, তাদের তিন -চার ঘণ্টা পরপর খাবার খেতে হবে।দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা চলবে না। পুষ্টিকর উচ্চ ক্যালরির খাবার যদি বারবার গ্রহণ করা হয় এবং প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা যদি পূরণ করা যায়, সে ক্ষেত্রে দ্রুত ওজন বাড়ানো সম্ভব।
৪.শর্করা জাতীয় খাবার :অনেকেই শর্করা একেবারে কম গ্রহণ করেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। যাদের ওজন কম, তাদের অবশ্যই মোট ক্যালরি শতকরা ৫০-৬০ভাগ শর্করা গ্রহণ করতে হবে। দিনে তিনবার প্রধান খাবার হিসেবে শর্করা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের খাবারের মধ্যে আলু, আটা, চাল, পাস্তা অন্যতম।
৫.আমিষ যুক্ত খাবার গ্রহণ :ওজন বাড়াতে আমিষ যুক্ত খাবার খাওয়া জরুরী। শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১দশমিক ৫থেকে ২ দশমিক ২ গ্রাম আমিষ নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, বিজ জাতীয় খাবার আমিষের ভালো উৎস।
ওজন বৃদ্ধি করার ব্যায়াম
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যায়াম খুদা বাড়াতে, খাবার ভালো মতো হজম করতেও সাহায্য করে। স্লিম হওয়ার জন্য ব্যায়াম করতে বলা হয়, কিন্তু ওজন বাড়ানোর জন্যও ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ওজন বাড়াতে শরীরচর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকেই জানে না। ওজন ঠিকঠাক রাখা ও শরীরের মোটা বলিজম বাড়াতে শরীরচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।
যে যার সুবিধা মত ও শারীরিক কন্ডিশন অনুযায়ী ব্যায়াম, হাটা, সুইমিং, দড়ি লাফ, ইয়োগা কিংবা অন্যান্য ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিতে পারেন। কিন্তু যারা আন্ডার ওয়েট বা ওজন বাড়াতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য শরীরচর্চার গুরুত্ব ঠিক কতটুকু? এই ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত আমাদের সবারই। ওজন তাড়াতে শরীরচর্চার করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জেনে নেই চলুন।
ওজন বাড়াতে শরীরচর্চার গুরুত্ব :ওজন বাড়াতে হলে বেশি বেশি খেলেই হবে, ব্যায়াম করার দরকার কি? জানি, এই কথাটা অনেকেই ভাবছেন। সুস্থ, সবল, রোগমুক্তি শরীর পেতে এবং সঠিক নিয়ম মেনে ওজন বাড়াতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। আপনার লক্ষ্য টোনড আপ বডি শেইপ পাওয়া, যেটাকে ঠিক থাকা বলে। আন্ডারোয়েট হলে অনেক রকম সমস্যা হতে পারে। বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিকঠাক রাখা খুবই প্রয়োজন। রোগা ও শুকনো শরীর হলে খাবার-দাবারে যেমন খেয়াল রাখতে হবে, ঠিক তেমনি শরীরচর্চার দিকেও নিজেকে মোটিভেট করতে হবে। কিন্তু কি কি উপকার পাবেন এক্সারসাইজ থেকে, সেটাই আজ আমরা জানাবো।
১.বেশি সুগঠিত করতে :
আমাদের পেশির ওজন চর্বি তুলনায় বেশি। পেশীর ওজন বাড়াতে ব্যায়াম করা উচিত। এতে শরীরের ওজন ও বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত ব্যায়ামে পেশী হবে সুগঠিত, সেই সাথে শরীর ও থাকবে ফিট। মেদবহুল শরীর কেউ পেতে চায় না, রাইট? ওজন বাড়াতে শরীরচর্চার ভূমিকা এখানেই অনেকটাই, কেননা এটি আপনার শরীরের বেশি সুগঠিত করতে হেল্প করবে।
২.ক্ষুধা মন্দা কাটিয়ে উঠতে :
ব্যায়াম করলে খোদা বাড়বে। তাই সাধারণ ক্ষুধা মন্দা কাটিয়ে আপনি খেতে পারবেন,খাবারের রুচি বাড়বে। যাদের ওয়েট কম, তাদের কমন সমস্যা এইটা যে, অল্প খেলে পেট ভরে যায় বা খেতে অরজি লাগে। নিয়ম মত শরীর চর্চা করলে প্রবলেমটা থেকে মুক্তি পাবেন এবং ক্ষুধাও বাড়বে, যেটা ওজন বাড়াতে আপনাকে অনেকটাই হেল্প করবে।
৩.শারীরিক শক্তি বাড়াতে :
রোগা পটকা, তালপাতার সেপাই, হ্যাংলা "এসব বলে অ্যাবিউজ করা হয় ওজন কম হলে। আর আশেপাশের সবাই ধরেই নেয় যে তার গায়ে কোন শক্তি নেই। ওজন কম হলেই যে তার শক্তি কম, এটা সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু অনেকেই নিজেদের হালকা পাতলা শরীরটা নিয়ে দুর্ভাবনাই থাকেন এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে চান। সেক্ষেত্রে সঠিক উপায়ে ব্যায়াম হতে পারে বেস্ট স্লোশন।
৪.মেটাবলিজম ঠিক রাখতে :
আপনি যত হালকা পাতলা হন না কেন, ব্যায়ামে দারুন উপকৃত হবেন। কেননা এটি মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সহায়তা করবে। হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করবে। এতে আপনার খাওয়ার রুচি বাড়বে, ঘুম ভালো হবে, সেই সাথে পরিমিত পরিমাণের ওয়েট অর্জন হবে। অনেকেই আছেন খাবার ঠিকমতো পরিপাক হয় না, খাবার আগ্রহ কমতে থাকে, এর ফলে ওজনটাও কমে যায়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরচর্চার কোন বিকল্প নেই।
ওজন বৃদ্ধি করার তালিকা
ওজন বাড়ানোর ডায়েটে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার এবং হালকা নাস্তা হিসেবে কোন খাবার গুলো খাওয়া যেতে পারে তা তুলে ধরা হলো-
সকালের নাস্তা :ওজন বাড়ানোর জন্য সকালে নাস্তা যে খাবারগুলো যুক্ত করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে দুধ, কলা, ডিম ও খেজুর.
দুধ :দুধ শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদানে দুধে পাওয়া যায়।দুধে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি -১২রয়েছে। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে, আর ভিটামিন বি -১২রক্ত তৈরিতে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।দুধ ওজন বাড়াতে বেশ সাহায্য করে। তাই দুধ খাওয়া খুবই প্রয়োজন।
কলা :গলার ভিটামিন বি -৬আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার আছে,যা হজমে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানোর সাথে সম্পর্ক আছে। এছাড়া কলা খুব সহজলভ্য, বাজারে সারা বছরই পাওয়া যায়। খাওয়ার আগে কেটে নেওয়ার আমায় নিয়ে খাবার ঝামেলা না থাকায়, সহজেই যেকোনো সময় দুইটা কলা খেয়ে ফেলা যায়।
ডিম :ডিম কে প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন বলা হয়। এর কারণ এতে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ডিমে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এবং ভিটামিন বি ২ ত্বককে সুস্থ ও সুন্দর রাখে। ডিমের জিংক নামের মিনারেল থাকে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ওজন বৃদ্ধি করতে সকালের নাস্তার সাথে ডিম খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
খেজুর :এটি একটি সাধারণ পুষ্টিগুণের ফল।এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা দাঁত ও হাড়ের সুস্থ ভালো রাখে। এছাড়া এতে আইরন আর ফলিক অ্যাসিড থাকে। যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। খেজুরে ফাইবার বা আজ থাকে। ফাইবার হজমের সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে। তাই সকালে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নিলে ওজন বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
দুপুরের খাবার :
দুপুরের খাবারে ডাল খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ আছে। মুরগি ও খাসির মাংস থেকে যেমন প্রোটিন পাওয়া যায়, তেমনি ডাল থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়। কিন্তু গরু খাসির মাংসে কিছু ক্ষতিকর চর্বি থাকে। ডালের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি নেই। তাছাড়া আয়রন পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম জীবনে তো অনেক কুষ্টিয়া উপাদান রয়েছে। তাই আমাদের দুপুরের খাবারে শরীর সুস্থ রাখতে আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজন
রাতের খাবার:
রাতের খাবার দুপুরের জন্য যেসব খাবার উল্লেখ করা হয়েছে, ওজন বৃদ্ধির জন্য সেগুলো রাতের খাবারের সময়ও প্রযোজ্য। দুপুরে ব্যস্ততার বা বাসার বাইরে থাকার কারণে যদি কিছু বাদ পড়ে যায় রাতের খাবারে যোগ করে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া রাতে বাদাম জাতীয় খাবার খেলে খুব ভালো হয়। ওজন বৃদ্ধি করতে এটি খুবই সহায়ক।
স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধি :
ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগেই দেখতে হবে ওজন কেন কমে যাচ্ছে বা ওজন বাড়ছে না কেন। থাইরয়েড সমস্যা, লিভারের কোন রোগ বা হজমের সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ওজন কম হয়ে যেতে পারে। তার আগে দেখতে হবে ওজন কিভাবে কমছে। ধীরে ধীরে কমছে নাকি হঠাৎ করে কমে গেছে। এক বছর আগে কেমন ছিল, এখন কেমন আছে এগুলো দেখতে হবে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। লো প্রেসার থাকলে আপনি প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় ক্যালরি খাবার খেতে পারেন।
যেমন দুধ ডিম, ভাতের মাড়,প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ ডাল সিমের বিচি ইত্যাদি। ফ্যাট জাতীয় খাবার যেমন বাদাম ননিযুক্ত পনির ইত্যাদি। বিভিন্ন রকমের ও শাকসবজি খেতে পারেন। ভুট্টা সিদ্ধ করে সালাদের মতন খেতে পারেন।
ভিটামিন খেয়ে ওজন বৃদ্ধি :
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ওজন বাড়ানোর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার খাবার থেকে এনার্জি শোষণে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভিটামিন বি ১থায়ামিন এবং ভিটামিন বি ১২ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যদি ভিটামিনের অভাব থাকে, তবে তা ওজন কম থাকা বা আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সমস্যার কারণ হতে পারে। ওজন বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট কোন ভিটামিন সরাসরি কাজ করে না। তবে কিছু ভিটামিন শরীরের মেটাবলিজম, পুষ্টি শোষণ এবং শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। জাফরক্ষ হবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন ভিটামিন বি,ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই।
ভিটামিন বি :ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ওজন বাড়ানোর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।যেমন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধ জাত পণ্য, বাদাম, কলা, ছোলা ইত্যাদি।
ভিটামিন সি :ভিটামিন সি সরাসরি ওজন বাড়ানোর সাথে যুক্ত না হলেও এটি খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণের সাহায্য করে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো হলো -লেবু, কমলালেবু, আমলকি, পিয়ারা, টমেটো, বিটরুট, সজনে পাতা, স্ট্রবেরি, পেঁপে, পুঁইশাক ইত্যাদি.
ভিটামিন ডি :ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।যা হাড়ও পেশি গঠনে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার হলো-ডিমের কুসুম,দুধ, দই, মাশরুম, ঘি, সূর্যের আলো,ইত্যাদি
ভিটামিন ই :ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যার শরীরের কোন পুনর্গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের সেলুলার ক্ষতি প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ই যুক্ত খাবার গুলো হলো -বাদাম, সূর্যমুখী তেল, সবুজ শাকসবজি, চর্বিহীন মাছ, বিভিন্ন ধরনের মরিচ ইত্যাদি।
মোটা হওয়ার জন্য করণীয় :
মোটা হওয়ার জন্য কিছু করনীয় অবশ্যই আমাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। সেগুলো নিম্ন রূপ -
১.ক্যালোরি বাড়ান
২.উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।
৩.ঘনঘন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪.ঘরোয়া পানিও ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
৫.ঘড়ুয়া কিছু খাবার নিয়মত গ্রহণ করুন।
৬.ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করুন।
৭.পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানোর জরুরী।
৮.হরমোন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
৯.প্রাকৃতিক সুন্নাহ ও খাবার গ্রহণ করুন।
১০.পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
পুষ্টিকর খাবার খেয়ে ওজন বৃদ্ধি
স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর জন্য, উচ্চ ক্যালরি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উভয়ই সরবরাহ করে এমন খাবারের উপর মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবারগুলি কেবল ক্যালরি গ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করে না। বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন খনিজ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সরবরাহ করে। আপনার ওজন বৃদ্ধি ডায়েট প্লানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনাকে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে ওজন বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, কার্বোহাইড্র, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার ইত্যাদি।
স্বাস্থ্যকর চর্বি :স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন বাদামের মাখন, জলপাই তেল ও নারিকেল তেল, বাদাম ও বীজ এবং এভোকাডো।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার :
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলো হল ফ্যাটি মাছ, ডাল, ডিম, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধ জাত পণ্য।
কার্বোহাইড্রেট :কার্বোহাইডেট হলো একটি প্রাথমিক শক্তি উৎস। ওজন বাড়ানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কার্বোহাইডেট খাবারগুলো হল -মিষ্টি আলু, আত্ম শস্যদানা, আলু, ফল ইত্যাদি।
উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার :
ওজন বৃদ্ধির জন্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খুব প্রয়োজন। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারগুলো হল -কটেজ পনির, শক্ত সিদ্ধ ডিম, ডার্ক চকলেট, এনার্জি বার, শাকসবজি ইত্যাদি।
আরো পড়ুন :জেনে নিন ওজন বাড়ানোর দশটি কার্যকর উপায়।
ওজন বাড়ানোর জন্য সহজ ও কার্যকর দশটি উপায়ে নিচে দেওয়া হল -
১.দিনে ৫-৬বার খাওয়া।
২.পর্যাপ্ত পানি পান করা।
৩.ঘুম ঠিক রাখতে হবে।
৪.খাওয়ার রুটিন ঠিক রাখতে হবে।
৫.হেলদি নাস্তা খাওয়া
৬.ওজন ভালো রাখতে কিছু ঘরোয়া টিপস।
৭.যে অভ্যাসগুলো ওজন বাড়াতে বাধা দেয়।
৮.ব্যায়াম করুন।
৯.প্রোটিন যুক্ত খাবার খান।
১০.উচ্চ ক্যালরি ও পুষ্টিকর খাবার খান।
১.দিনে ৫-৬বার খাওয়া :কম ওজনের ব্যক্তিরা একসাথে অনেক খেতে পারে না।তাই দিনে ৩বেলার পরিবর্তে ৫-৬বার ছোট ছোট মিল খাওয়া ভালো।
২.পর্যাপ্ত পানি পান করা :খাওয়া আর হজমের মধ্যে পানি একটি বড় ভূমিকা রাখে. কিন্তু খাওয়ার ঠিক আগে বেশি পানি খেলে পেট ভরে যায়। তাই খাবারে ৩০ মিনিট পর পানি খাওয়া ভালো।
৩.ঘুম ঠিক রাখতে হবে :ওজন বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ঘন্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। ঘুম কম হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং শরীর দুর্বল থাকে।
৪.খাওয়ার রুটিন ঠিক রাখতে হবে :নিয়মিত সময়ে শরীর ক্যালরি জমাতে পারে না।তাই সকালে উঠে তিরিশ মিনিটের মধ্যে নাস্তা, তারপর তিন ঘন্টা অন্তর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৫.হেলদি নাস্তা খাওয়া :হেলদি খেতে হবে যেমন কলা বা আমশেক,বাদাম ও কিসমিস, ছোলার চাট, পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ।
৬.ওজন ভালো রাখতে কিছু ঘরোয়া টিপস :সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম জল ও লেবুর রস পান করুন। বিটনুন ও জিরা দিয়ে দই খান। অল্প আদা চিবিয়ে নিলে হজম শক্তি বাড়ে।
৭.যে অভ্যাসগুলো ওজন বাড়াতে বাধা দেয় :খাবার ভাত দেওয়া বা এক বালা না খাওয়া। অত্যাধিক ক্যাফেইন গ্রহণ। শুধুমাত্র ফাস্ট ফুড খাওয়া। অতিরিক্ত মানসিক চাপ। খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া। এই অভ্যাস গুলো ওজন বাড়াতে বাধা দেয়।
৮.ব্যায়াম করুন :ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করা দরকার। কিছু ব্যায়াম করা খুব জরুরী যেমন -পুশআপ, প্ল্যাংক, স্টেচিং, স্কোয়াট।
৯.প্রোটিন যুক্ত খাবার খান :ওজন প্রোটিন যুক্ত খাবার গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলো হলো -মুরগির বুকের মাংস, ডিম সিদ্ধ, ঘন দই, ছানা ও পনির,ডাল মুগ ডাল সয়াবিন।
১০.উচ্চ ক্যালরি ও পুষ্টিকর খাবার :ওজন বাড়াতে চাইলে উচ্চ ক্যালরি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে উদাহরণস্বরূপ -ঘি মাখন বাদাম তেল, কলা আম ছোলা আলু, ছানা, ডিম মুরগি মাছ।
পরিমাণ মতো ঘুমিয়ে ওজন বৃদ্ধি :
দ্রুত ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আপনি যদি বেশি ঘুমান স্থায়ীভাবে তাহলে আপনি অতি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে পারবেন। ওজন বৃদ্ধির জন্য ঘুমের কোন জুড়ি নেই। ঘুমের অভ্যাস হলে স্থায়ী ওজন বাড়াতে পারে। মূলত ওজোন স্থায়ী নয়। বেশি ঘুমানো ও ওজন বৃদ্ধির মধ্যে জটিল সম্পর্ক থাকতে পারে। কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে, অতিরিক্ত ঘুম এবং অপর্যাপ্ত ঘুম দুটোই ওজন বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। বেশি ঘুম শরীরের ক্যালরি দহনে করতে পারে। যাদের ঘুম কম তাদের ওজন বৃদ্ধি হয় না।
ওজন বৃদ্ধির জন্য পরিমিত ঘুম খুবই প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন বেশি ঘুমালে ভুরি বাড়ে, আবার কেউ কেউ বলেন শরীরের মেদ জমালে বেশি বেশি ঘুম পায়। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে অন্য কথা তাদের মতে গরম কম ঘুম মোটা হওয়ার বড় কারণ। দেখা যাচ্ছে যারা কম ঘুমান তাদের মধ্যে ওজন বাড়ার প্রবণতা বেশি। তাই আপনাকে নিয়ম মেনে ঘুমাতে হবে। এতে আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
ক্যালোরি ও নিউটন জেনে খাবার খাওয়া
ওজন বৃদ্ধি করার জন্য আপনাকে ক্যালোরি যে খাবার খেতে হবে। যেমন উদাহরণস্বরূপ -আমাদের ভাতের চামুচে প্রায় এক কাপ ভাত ধরে। ২ চামচ ভাত মানে দুই কাপ। একটা ভাত প্রায় ২০০ ক্যালোরি, অর্থাৎ একবেলার ভাতে ৪০০ ক্যালোরি। তরকারির আন্দাজ একটু কঠিন। মাংস বা মাছের পিস হিসাবে করতে পারেন। সবজি বা ফলের ক্যালরি হিসাব করার ঝামেলায় আমি সাধারণত যায় না। তবে আপনি চাইলে একই নিয়মে করতে পারেন।
চিনির বেলায় ব্যাপারটা বেশি জরুরী। আপনি কি খাচ্ছেন তাতে কয় চা চামচ চিনি আছে সেটা আন্দাজ করে, এই অনুযায়ী হিসাব করে নিন।তাই ওজন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে ও নিউটনের গুরুত্ব অনেক বেশি। ক্যালোরি ও নিউটন না জেনে তোমার খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত ক্যালরি আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে। কোন খাবারে কতটুকু ক্যালরি আছে আপনাকে বুঝেশুনে খেতে হবে। তাহলে আপনি ওজন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন।
শেষ কথা : দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করার উপায়
দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করার উপায় হল সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া। সঠিক সময়ে খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব। যেমন -সকালের খাবার সকলে,দুপুরের খাবার দুপুরে, রাতের খাবার রাতে। মনে রাখতে হবে রাতের খাবার দুপুরের খাবার ও নৈশ ভোজনের মধ্যে আট ঘন্টার ব্যবধান থাকা উচিত। দুপুরের খাবার হজম করতে পচনতন্ত্রের প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগে। আবার সকালের খাবারের সাথে রাতের খাবারের ব্যবধান আরো ঘন্টা।
জীবন মাত্র একটাই। আপনার জীবনকে সাজানোর অধিকার শুধুমাত্র আপনারই আছে।তাই আপনি জীবনে ভালো থাকতে চাইলে, উপরের কথাগুলো ভালো লাগলে আপনিও তাড়াতাড়ি ওজন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন। তাই ওজন বৃদ্ধি করার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করেন সাথে থাকেন। আবারও ভালো কিছু নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url